আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করার দাবিতে মাঠে নামছে সাতটি রাজনৈতিক দল। তারা যুগপৎ কর্মসূচির মাধ্যমে ভোট ও নির্বাচন সংক্রান্ত বৈষম্য দূরীকরণ, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রাথমিক তিন দিনের বিক্ষোভ ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে, এরপর পর্যায়ক্রমে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রথমে পৃথক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এরপর নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও এই যুগপৎ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছে।দলগুলোর এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, জাতীয় নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা এবং ভোটে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (পিআর) চালু করার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এছাড়া বিগত সরকারের জুলুম, দুর্নীতি ও গণহত্যার বিচারের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এবং স্বৈরাচার ও জাতীয় পার্টির কার্যক্রম সীমিত করার বিষয়গুলোও তাদের দাবিতে অন্তর্ভুক্ত।জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘প্রতিটি কর্মসূচি জনগণের দাবির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা সরকারের কাছে কার্যকর প্রতিশ্রুতি চাইছি।’খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘সরকার যদি জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানের স্পষ্ট উদ্যোগ না নেবে, পরবর্তীতে বৃহত্তর কর্মসূচি হবে।’ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির (চরমোনাইর পীর) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিমও বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান শুধু ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য হয়নি। দেশের মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই মূল উদ্দেশ্য।’নির্বাচন সংক্রান্ত এই যুগপৎ কর্মসূচি শহর ও জেলা-উপজেলায় পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায়, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশে জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির পরিকল্পনায় ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত মিছিল ও সমাবেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।কৌশলগত কারণে কিছু দল এখনও সরাসরি কর্মসূচিতে যুক্ত হয়নি, তবে সংবিধান ও রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের বিষয়ে তাদের অবস্থান মূল দলের কাছাকাছি। চরমোনাই পীর বলেন, ‘এ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চাপ দিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।’ একই সঙ্গে তারা ইসলামপন্থী ভোটের ঐক্যবদ্ধকরণের মাধ্যমে কার্যকর প্রভাব সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।এই যুগপৎ কর্মসূচি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নির্বাচনী রাজনীতি মাঠে গড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে কিছু গোয়েন্দা কর্মকর্তাও এই কর্মসূচি দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির দিকে হেলেছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর থেকে সরকারের মনোভাব এই অনুমানকে শক্তিশালী করেছে। তাই তারা জুনের জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন না করলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট সম্ভব হবে না বলে মনে করছে।